শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলুপ্ত প্রায় শরতের কাশফুল!

সামছুল আলম সাদ্দাম
৭ অক্টোবর ২০২২ ১২:২৯ |আপডেট : ৯ অক্টোবর ২০২২ ০২:১৭
সামছুল আলম সাদ্দাম, লেখক ও সাংবাদিক
সামছুল আলম সাদ্দাম, লেখক ও সাংবাদিক

কবি নির্মলেন্দু গুণ কাশফুল নিয়ে লিখেছেন-‘ক্ষেতের আলে নদীর কূলে পুকুরের ওই পাড়টায়, হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়। উচ্চ দোলা পাখির মত কাশ বনে এক কন্যে, তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে। শরত রানী যেন কাশের বোরখা খানি খুলে, কাশ বনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে।’

গ্রামীণ জনপদে দেখা যায় না কবির সেই কল্পিত কাশবন। কাশবনে নববধূর আনাগোনা। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস নিয়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই পাড়সহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচা-নাচি দেখা যেত।

তেমনটা এখন আর চোখে পড়ে না। নদীর দু’ধারে, আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুরপাড় ও নদের পাড় সাদা হয়ে থাকতো কাশফুলে। পালকের মতো নরম এবং সাদা ফুলের কাশফুল এখন আর পড়ে না চোখে।


শরৎকালে রোদ-মেঘের খেলায় কাশবনের ফুলগুলো নদীর ঢেউয়ের মতো দোল খেতো। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটার সাথে আরেকটা। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো।


মনে হতো এ যেন নীল আকাশে সাদা বকের খেলা। তখন ভিন্ন রকম আনন্দে মন ভরে যেতো। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই কাশফুলের সাদা হাসি। গ্রামের নববধূরা অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়ে নরম কাশফুল মাথার খোঁপায় পড়তে কাশবনে ছুঁটে যেত দলবেঁধে। মাথার খোঁপায় পড়তো নরম পালকের মতো সাদা কাশফুল। 

কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি, দোন তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।


বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তির দাপটে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কাশবন উজাড় হচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিকে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।



মন্তব্য করুন