বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা, সচেতন হওয়া জরুরি
সামছুল আলম সাদ্দাম, লেখক ও সাংবাদিক
বাংলাদেশসহ ৪৫টি দেশ খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে- এমন আভাস দিচ্ছে জাতিসংঘ। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৭টি সংকট বিরাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে- ডলার সংকট, জ্বালানির উচ্চমূল্য, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মূল্যায়নে উঠে এসেছে এসব বিষয়। বিশেষ করে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা খুবই জরুরি। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পুরোপুরি বন্ধ করা, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার লাগাম টেনে ধরা, দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমন করা এবং দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার বিকল্প নেই।
করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশও এর ক্ষতিকর প্রভাবের বাইরে নয়। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরি। তবে উদ্বিগ্ন না হয়ে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও খাদ্য সংকট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত
অনুষ্ঠানে দেশে কোনোরকম খাদ্যের অভাব যেন দেখা না দেয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান
জানিয়েছেন। জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের কথা বলছে। অতীতে আমরা দুর্ভিক্ষ দেখেছি, দেখেছি এর
ভয়াবহতা। তেমন দুঃস্বপ্নের দিন আগামীতে আর দেখতে চাই না। আমাদের দেশের ভূমি উর্বর।
অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে। পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে
গুরুত্ব দিলে একদিকে যেমন দেশের চাহিদা মিটবে তেমনি আসন্ন বৈশ্বিক খাদ্য ঘাটতিতে বাংলাদেশ
দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশগুলোতে খাদ্য জোগান দিয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত রাখতে সক্ষম হবে। উৎপাদিত
পণ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাও নিতে হবে। এতে অনেক খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হওয়া থেকে
রক্ষা পাবে।
এছাড়া আমদানিনির্ভর পণ্য যেমন- ভোজ্যতেল, ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদনে কৃষকরা মনোযোগী হলে অনেকটাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশা করি। এজন্য সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করা দরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিপিডির প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের আমদানিতে কর রেয়াত। এতে দাম কিছুটা কমবে। এছাড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এককভাবে বা কয়েকজন মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা ভেঙে দিতে হবে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে খাদ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইতোমধ্যে দেশের মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শুধু পণ্য সরবরাহে সমস্যা হয়নি, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সিপিডির প্রস্তাবগুলো আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনতে হবে।
সামছুল আলম সাদ্দাম
লেখক ও সাংবাদিক
মন্তব্য করুন