শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীকে রাবি ছাত্রলীগ নেতা

‘হল কি তোর বাপের? থাকতে হলে টাকাপয়সা দিতে হবে’

রাবি প্রতিনিধি
২৭ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩২ |আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরে হলের সিট থেকে এক ছাত্রকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরে হলের সিট থেকে এক ছাত্রকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদকে মারধর করে হলের সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মনিরুল ইসলাম স্বপন রোববার রাতে ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

এর আগে ১২ মার্চ ফয়সালকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা স্বপন বলেন, তুমি হল থেকে চলে না গেলে জানে মেরে ফেলব।

রোববার মারধরের পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নগরীর মতিহার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে মনিরুল ইসলাম স্বপনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ থেকে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ১২ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে মনিরুল ইসলাম স্বপন এসে তাঁকে বলেন যে তুমি এখন রুম থেকে বের হয়ে চলে যাও, না গেলে তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলবতোমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নাই বলে অন্য একটি ছেলের বিছানাপত্র তাঁর কক্ষে রেখে চলে যান।

এরপর গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবার রুমে আসেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন আসেন। স্বপন কক্ষে এসে তাঁকে বলেন, তোকে না রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলাম? তুই এই রুমে এখনো কী করিস? হল কি তোর বাপের, আমার এই ব্লকে থাকতে হলে আমাকে টাকাপয়সা দিয়ে থাকতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি তাঁর পোশাক ধরে কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করার চেষ্টা করেন।

বের হতে না চাইলে তাঁরা তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। মনিরুল ইসলাম তাঁর ডান হাতে লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। এতে তাঁর ডান হাতে আঘাত লাগে। পরে তাঁরা তাঁর বিছানাপত্র বের করে বাইরে ফেলে দেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফয়সাল আহমেদ বলেন, আগে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে গতকাল স্বপন কয়েকজন নিয়ে এসে আমাকে মারধর করে এবং আমার কক্ষে অন্যজনের বেডপত্র রেখে যায়।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মনিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমি কাউকে মারধর করিনি। আমি আগামী সম্মেলনে পদপ্রার্থী। তাই আমার বিরুদ্ধে কারও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

তিনি আরও বলেন, ওই ছেলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমানের (অপু) মাধ্যমে উঠেছে। হয়তো টাকাপয়সা দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত হোক। এ ঘটনার পর আমি নিজেও থানায় মানহানির অভিযোগ করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমানকে (অপু) একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যদি সত্যতা পাই তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ফয়সাল নামের একজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ঘটনা হওয়ায় আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। আমরাও তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, একটি ছেলে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আমি জানি। হল প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি সমাধান করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। ওই কক্ষের সমস্যারও সমাধান করেছি। ফয়সাল আহমেদের রুমে যাকে জোর করে তোলা হয়েছে তাঁকে তাঁর নির্ধারিত সিটে চলে যাওয়ার জন্য বলেছি।

মারধরের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, আমার কাছে এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। ফলে আমি অফিশিয়াল কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না।



মন্তব্য করুন