ভুয়া ভোটার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তুলকালাম কাণ্ড
ছবি : সংগৃহীত
দেশের উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রস্থ নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কতিপয় ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির ও অনিয়মের ফলে নিজস্ব ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে পদ আঁকড়ে ধরে থাকতে রাতের অন্ধকারে তৈরি করা হয়েছে অর্ধশতাধিক ভুয়া ভোটার। এ নিয়ে উক্ত সংগঠনের অভ্যন্তরে চলছে তুলকালাম কাণ্ড।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রস্থ নর্থ বেঙ্গল
ফাউন্ডেশনের নির্বাচন ও নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সদস্য সংগ্রহ শেষে ভোটার তালিকা
চুড়ান্ত করা হয়। গত ৩০ জুন ছিলো ভোটার হওয়ার শেষ দিন। এদিনের ২৫১জন মেম্বারসহ সংগঠনের
সর্বমোট ভোটার হয়েছে ৪১৭জন। এর আগে ১৬৬জন মেম্বারশীপ গ্রহন করেন। এই বৈধ ৪১৭জন ভোটার
নিয়েই আগামীতে ফাউন্ডেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সংগঠনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে থাকে চলতি
সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটার তালিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা বিভ্রান্তি। ইতিপূর্বে
ঘোষিত ৪১৭জন ভোটারের স্থলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফের তথ্য মতে
তার কাছে থাকা ১৫০ জনের স্থলে দুই শতাধিক সদস্যের আবেদন জমা রয়েছে বলে দাবি করায় এই
বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে সংগঠনের নেতৃত্ব। অনিশ্চয়তার
মুখে পড়েছে আসন্ন নির্বাচন। একই সাথে সংগঠনের সদস্যদের মাঝে বইছে বিভক্তির বাতাস। এ
ঘটনায় প্রচুর সদস্য তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তবে সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে
বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে পূর্ব ঘোষিত ৪১৭জন ভোটার তালিকা দিয়েই আগামী নির্বাচন সম্পন্ন
করার দাবি জানিয়েছেন অধিকাংশ সদস্য।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রস্থ
নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ২০০৯ সালে গঠন করা হলেও এর আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১০ সালে। কয়েক বছরের
মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ সংগঠনটি। সমিতির বর্তমান ডা. মো. আব্দুল লতিফ ২ বছরের
জন্য নির্বাচিত হলেও তালবাহানা করে সাড়ে ৭ বছর স্বেচ্ছায় স্বপদে বহাল রয়েছেন। নিউ ইয়র্ক
প্রবাসীদের কাছে তার তেমন কোন পরিচিত নাই বলে এই পদ ধরে রেখে নিজের পরিচিতি বাড়াতে
চান। গত তিন বছর ধরে কমিটির কোন সভাও করতে পারেননি তিনি। অবশেষে একই জেলার ডা. চৌধুরী
সারোয়ারুল হাসান, মো. মিল্টন, পাশের জেলার দবিরুল ইসলাম এবং জহিরুল ইসলাম টুকুর যোগসাজসে
রাতের অন্ধকারে ৫৬জন নতুন সদস্য/ভোটার তৈরি করেন, যা বর্তমানে সাবার চোখে ধরা পড়ে।
এসব ঘটনা জানার পর নির্বাচন কমিশনার ডা.
মাসুদুল হাসান বলেন, আমি শেখ হাসিনার সৈনিক হিসেবে বলছি, প্রবাসের এই জনপ্রিয় নর্থ
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে কোন বিএনপি-জামাতের কোন স্থান হবে না। সকলের পরামর্শেই একটি সুন্দর
ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে এ সংগঠনের ওইতিহ্যকে বজায় রাখতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ভোটার
হওয়ার সর্বশেষ তারিখ ছিল চলতি বছরের গত ৩০ জুন। ঐদিন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসানুজ্জামান
ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল সহ সংগঠনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের
নেতৃত্বে ২৫১ জন ভোটার জমা হয়। আর বর্তমান সভাপতি ডা. মো. আব্দুল লতিফ-এর কাছে সর্বোচ্চ
১৫০ জন মেম্বার জমা হয় বলে ডা. লতিফ সবার সামনে ঘোষণা দেন। এছাড়া আরো ১৬ জন সদস্যের
তালিকা, তার অফিসে তার অনুপস্থিতিতে জমা দেওয়া হয় বলে ডা. লতিফ জানান। সব মিলিয়ে ২০২৩
এর নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ৪১৭ জন ভোটার আছে বলে ডা. লতিফ সকল পক্ষের উপস্থিতিতে
একটি লিখিত প্রত্যয়ন পত্র দেন। যার খবর নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ায়ও প্রকাশিত হয়।
কিন্তু ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পক্ষ এই মেম্বারশীপের
চূড়ান্ত তালিকাটি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রকাশের দাবি জানালেও নানা অজুহাতে
সদস্য/ভোটার তালিকা প্রায় চার সপ্তাহ পর গত ২৮ জুলাই শুক্রবার সভাপতি ডা. লতিফ একটি
গড়মিলের তালিকা প্রকাশের অপচেষ্টা করেন বলে জানা যায়। গত শুক্রবার ডা. লতিফ তার কাছে
জমা থাকা ১৫০জন ভোটারের তালিকাটিকে দুই শতাধিক বলে দাবি করেন। ঐদিন নির্বাচন কমিশনের
কাছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দেওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ আরো এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়।
গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় প্রধান
নির্বাচন কমিশনার ডা. মাসুদুল হাসান, কমিশনের অন্যতম সদস্য ডা. রুহুল কুদ্দুস এবং মোহাম্মদ
দবিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সংগঠনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে প্রাক্তন
প্রধান উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ও সভাপতি প্রার্থী ডা.
চৌধুরী সারোয়ার হাসান, উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম টুকু, সহ-সভাপতি ডা. নার্গিস রহমান, সহ-সম্পাদক
মো. মিল্টন, প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ ও সহ-সভাপতি আবু তাহের, রাজশাহী জেলার প্রাক্তন সভাপতি
মো. মোতাহার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রাক্তন সভাপতি মনিরুল বাচ্চু, রাজশাহী জেলা
সমিতির সভাপতি শমসের আলম, রংপুরের সভাপতি মিজানুল হাসান, প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবুল কালাম
আজাদ, শাহাবুদ্দিন বাচ্চু, রাহিমুল হুদা ও শরিফুল ইসলাম প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত প্রায় সকলেই ভোটার তালিকা
চূড়ান্তকরণের গড়িমসির সমালোচনা এবং বর্তমান সভাপতি ডা. লতিফ যেন তার ৩০ জুনের ঘোষণা
মোতাবেক অতি দ্রুত সর্বোচ্চ ৪১৭ জনের তালিকা প্রকাশ করেন। যাতে করে নির্বাচন কমিশন
আগামী কার্যকরী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারেন। এ ব্যাপারে ডা. আব্দুল লতিফের
মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সাংবাদিকের কল দেখে তিনি ফোন ধরেননি।
অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ডা. মাসুদুল
হাসান জানান, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। সবমিলিয়ে আমাদের কাছে ৪৪২জন
সদস্য/ভোটারের তালিকা রয়েছে। অতিরিক্ত ভোটার ও অভিযোগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
এদিকে, ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
হাসানুজ্জামান হাসান ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা নাসির খান পল গত ৩০ জুন সংগঠনের
বিদায়ী সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফের হাতে ফিসহ মেম্বারশিপ ফরম তুলে দেন। এ সময় সংগঠনের
সিনিয়র সহ-সভাপতি তনু খান ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার এবিএম মিজানুল হাসান, মোতাহার হোসেন, আবু
তাহের, মোহর খান, রহিমুল হুদা, ফরিদ হোসেন, কামরুজ্জামান বাবু, স্বপ্না খান, শাহানারা
রীনা সহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
মেম্বারশিপ ফরম হস্তান্তর পর্বে ফাউন্ডেশনের
কর্মকর্তারা একদা প্রবাসের অন্যতম বৃহত্তম সামাজিক সংগঠন নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এর
হারানো গৌরব আবার ফিরিয়ে আনার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
হাসানুজ্জামান হাসান, বিদায়ী সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফসহ সকল কর্সকর্তাকে মান-অভিমান ভুলে
আবার একসাথে মিলেমিশে কাজ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জবাবে ডা. লতিফ বলেন,
আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই আগামীতে একটি শক্তিশালী নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
মন্তব্য করুন