শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

হঠাৎ কেন ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে বাংলাদেশ?

জিয়া হাসান
৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২১ |আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৪৯
বাংলাদেশি লেখক এবং অর্থনীতিবিদ  জিয়া হাসান
বাংলাদেশি লেখক এবং অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান

ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরের সময় উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তিতে সাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। হাসিনা-ম্যাখোঁ যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন তা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন ছিল না, এমনকি এর ব্যয়ভার বহন করার সক্ষমতা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, আগামী নির্বাচনের আগে ফ্রান্সকে খুশি করতেই এই উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তি। ওয়াশিংটনভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটে এক নিবন্ধে বাংলাদেশি লেখক এবং অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান এ মন্তব্য করেন।

নিবন্ধে বলা হয়, গত ১০-১১ সেপ্টেম্বর ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বাংলাদেশ সফরকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে। আর এসব কিছুর পিছনে ছিল একটি গভীর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা। সেই এজেন্ডায় প্রকৃতপক্ষে কারা উপকৃত হবেন, তা যাচাই করার দাবি রাখে।

সফরকালে মাখোঁ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যে ১০টি এয়ারবাস উড়োজাহাজ বিক্রির চুক্তি করেছেন। এই উড়োজাহাজ ক্রয় বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং বাংলাদেশকে বছরের পর বছর এর ভার বহন করতে হবে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, চীনের প্রভাববলয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে তৃতীয় পথ খুঁজছে পশ্চিমা অনেক দেশ। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ম্যাখোঁ তার সফর সাজিয়েছেন। বাংলাদেশে তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতাকে পুঁজি করা। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিতে পারে। আর এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে, ম্যাখোঁ বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে ফরাসি বিমানশিল্পের পক্ষে একটি লাভজনক চুক্তি স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হন।

এ চুক্তিটি এমন এক সময়ে স্বাক্ষরিত হলো যখন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠোর অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে এবং নির্বাচনে জোরপূর্বক প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ফ্রান্সের সঙ্গে উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এটি ইউরোপের সমর্থন আদায়ে সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কারণ বাংলাদেশের বহরে থাকা বেশিরভাগ বিমানই বোয়িং কোম্পানির। নতুন আরেকটি কোম্পানির বিমান চালানোর মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ পাইলট বাংলাদেশের নেই। প্রশিক্ষিত রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীর অভাব রয়েছে। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, এয়ারবাস থেকে দুটি ডেডিকেটেড কার্গো বিমান কেনার সিদ্ধান্ত।

কোনো টেন্ডার ছাড়াই এবং প্রযুক্তি ও আর্থিক মূল্যায়ন না করেই এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার।  বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার বিমানের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। যারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যখন এয়ারবাস কেনার ঘোষণা দেয় তখন মূল্যায়ন কমিটি মাত্র কয়েকটি নিষ্পত্তিহীন সভা করেছে এবং বিমান রাষ্ট্রের কাছে কোনো প্রতিবেদন পেশ করার ধারেকাছেও ছিল না। ঘটনার প্রকৃতি এবং ক্রমানুযায়ী এই ইঙ্গিত দেয় যে, সরকার পরিবর্তন হলে চুক্তিটি আইনি পর্যালোচনার মুখে পড়বে।

 



মন্তব্য করুন