ট্রাভিস হেডের বীরত্বে আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
ছবি : সংগৃহীত
আগ্রাসী ইনিংসে গ্যালারি উত্তাল করা রোহিত শর্মার ক্যাচটা ধরে যখন ট্রেভিস হেড মোতেরায় নামিয়েছেন পিন পতন নীরবতা। ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান স্মিথ বলে উঠলেন, এটাই টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। তখন ১০ ওভারে ভারতের রান ৮০। ভারতের পুঁজি কম হওয়ার পেছনে রোহিতের এই আউট পরে হয়েছে বড় প্রভাবক। তবে হেড আসল কাজ করেছেন ব্যাটিংয়েই।
৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কেঁপে উঠা দলকে
টেনে চ্যাম্পিয়ন বানাতে বাঁহাতি ওপেনার ঠান্ডা মাথায় খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। চরম
হতাশার মাঝেও এক পর্যায়ে ভারতীয় দর্শকরা দাঁড়িয়ে তালি দিলেন তাকে। চোটে পড়ে যার বিশ্বকাপ
খেলাই ছিল অনিশ্চিত, সেই হেডই উঁচু করলেন অজিদের মাথা।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে
এক লাখ ৩২ হাজার দর্শকের মহাসমুদ্র স্তব্ধ করে দিয়ে ৬ষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে
অস্ট্রেলিয়া। ভারতকে ফাইনালে ৬ উইকেটে হারানোর পথে হেড ১২০ বলে করেন ১৩৭ রান।
অথচ চোটে পড়ে বিশ্বকাপই খেলা হচ্ছিল না
তার। তাকে ভীষণ দরকার ভেবে অপেক্ষায় থাকল অজিরা। সেরে উঠে স্কোয়াডে ফিরলেন, ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ
মঞ্চ রাঙালেন। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে করলেন সেঞ্চুরি। চতুর্থ ক্রিকেটার
হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে হলেন ম্যাচ সেরা। মজার কথা হলো, যার সঙ্গে
জুটি গড়ে দলকে তীরে ভেড়ালেন সেই মারনাশ লাবুশানেরও খেলার কথা ছিলো না বিশ্বকাপ।
স্নায়ু চাপ জিতে হেড কিছু একটা করতে যাচ্ছেন
সেই আভাস শুরুতে দেন ফিল্ডিংয়ে ৩১ বলে ৪৭ করা রোহিতের মহা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তার সৌজন্যেই
নিতে পারে অজিরা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে
উড়াতে গিয়ে টাইমিং হলো না রোহিতের। কাভারের দিকে উড়ে যাওয়া বল ধরতে কাভার পয়েন্ট থেকে
পেছনে ছুটলেন হেড। চিতার গতিতে ছুটে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়েও বুঝে দেন অস্ট্রেলিয়ান
- 'ডিএনএ'।
পেছনে দৌড়ে বলকে নজর রাখা, শরীর জায়গা
মতো নিয়ে গিয়ে ক্যাচ লুফে ভারসাম্য রাখা- প্রতিটি কাজই ছিলো কঠিন, সব হতে হতো নিখুঁত।
এক ধাপেই বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি হলো না তার।
১০ ওভারে ৮০ রানে ২ উইকেট। ভারত তখনো বেশ
ভালো অবস্থায়। কিন্তু ওই ক্যাচের পরই যেন চাঙ্গা হয়ে উঠল অস্ট্রেলিয়া। দারুণ সব ফিল্ডিং
দেখা গেল মাঠজুড়ে। অনেকগুলো বাউন্ডারি আটকে দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার, মারনাশ লাবুশানেরা।
মাঝের ওভারে ৯৭ বলে বিরাট কোহলি-লোকেশ
রাহুলদের কোন বাউন্ডারি বের করতে দিলেন না তারা। হতাশ হয়ে চাপ বেড়ে পরে পথ হারালো ভারত।
মন্থর উইকেটে ২৪১ রান তবু ছিল না সহজ,
রাতের আলোয় বল স্যুয়িংও করবে শুরুতে, সেটা হলোও।
আগ্রাসী শুরুর মধ্যে জাসপ্রিট বুমরাহ, মোহাম্মদ শামির তোপে ৪৭ রানে ৩ উইকেট
হারিয়ে কেঁপে উঠল অজিরা।
এই প্রবল চাপ কী অনায়াসেই না শুষে নিলেন
হেড। লাবুশানেকে এক পাশে বসিয়ে ছুটতে থাকলেন তরতর করে। আলগা বল পেলেও দুরন্ত শটে সীমানা
ছাড়া করতে থাকলেন। রানরেটের চাপ ছিলই না, সেটা বুঝতে পেরে অহেতুক ঝুঁকির দিকে যাওয়ার
দরকার দেখলেন না তিনি।
কুলদীপ যাদবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৯৫ বলে
হেড সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ভারতীয় দর্শকরাও দাঁড়িয়ে গেলেন, তালি দিয়ে অভিনন্দিত করলেন
অজি বীরকে। ২০০৭ বিশ্বকাপের অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে
মনে করিয়ে দিলেন যেন তিনি।
লাবুশানের সঙ্গে ১৯৫ রানের জুটিতে তার
অবদান ১২৭। লাবুশানে সহায়ক ভূমিকায় থেকে টেস্ট মেজাজে করলেন ১১০ বলে
করলেন ৫৮ রান। এতেই বোঝা যায় হেডের দাপট, হেডের প্রভাব। চলতি বছর ভারতের বিপক্ষেই টেস্ট
চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ১৭৪ বলে বলে ১৬৩ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন। পাঁচ ম্যাচ বসে থাকার পর বিশ্বকাপে অভিষেকে ৬৭ বলে
করেন ১০৯ রান।
মন্তব্য করুন