শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাপপ্রবাহ বইছে ৪৮ জেলায়, আরও ৭ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪১ |আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৩
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বৈশাখের প্রবল খরতাপে পুড়ছে নগর-লোকালয়-প্রান্তর। তপ্ত বাতাস আগুনের হলকার মতো শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। তেষ্টায় শুকিয়ে যাচ্ছে বুক। শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট হয়ে উঠেছে অসহনীয়। তাতানো রোদ্দুর আর হাওয়ারুদ্ধ প্রকৃতিতে নেতিয়ে পড়ছে গাছ-গুল্ম-লতা। দেশজুড়ে যেন বইছে মরুভূমির লু হাওয়া। তাপপ্রবাহ বইছে ৪৮ জেলায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল সোমবার তাপমাত্রা খানিকটা কমেছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় গরমে অসুস্থ হয়ে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সহসা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় তাপদাহ থেকে এখনই নিস্তার মিলছে না। সোমবার আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদী অঞ্চলে ৪৪ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে তাপমাত্রা।

সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গাতে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দক্ষিণের জনপদ যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল চলতি বছরের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ওই দিনই রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিও ছিল এ বছরে নগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। 

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, মঙ্গল ও বুধবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়বে। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনকার কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকবে। এরপর আবার তিন দিন তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে। এই মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ থাকবে। মে মাসের শুরুতেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা কমে যাবে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে দেশে এ বছর এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হচ্ছে। ফলে গরম থেকেই যাচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলেই গরম কেটে যাবে। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। মূলত বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমি বায়ু না আসায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এ বছর মৌসুমি বায়ু আসতে দেরি হচ্ছে। কাজেই ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য আমাদের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতে পারে।

গরমে সাতজনের মৃত্যু: মাদারীপুরের ডাসারর উপজেলার বনগ্রাম এলাকায় হিটস্ট্রোকে আজগর আলী ব্যাপারী (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে নিজের খেতে কাজ করার সময় তীব্র রোদে ও গরমে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। চুয়াডাঙ্গায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন নারী মারা গেছেন। তারা দুজনই আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের বেগুয়ারখাল গ্রামের বাসিন্দা। সকাল সাড়ে ৯টায় স্বামীর জন্য মাঠে ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় আশুরা খাতুন (২৫) প্রাণ হারান। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় আয়েশা বেগম (৭০) নামে আরও একজন মারা যান।

রাজশাহীর বাগমারায় ভুট্টাক্ষেতে কাজের সময় সোমবার দুপুরে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মন্টু হোসেন (৪৫)। তিনি উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোশলেম আলীর ছেলে।

ঢাকা মেডিকেল নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তায় আব্দুল আউয়াল (৪৫) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওই রিকশাচালককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন বসাক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে।

বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রচণ্ড তাপদাহে তালগাছ থেকে পড়ে এক গাছির মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে গাছের মাথায় প্রচণ্ড গরমে নিচে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার। ওই গাছির নাম মো. আমজাদ হোসেন শেখ (৫৭)। তিনি সদর উপজেলার ভট্টপ্রতাপ গ্রামের মৃত আজহার আলী শেখের ছেলে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে হিটস্ট্রোকে রজব আলী (৫৫) নামে এক কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। রোববার বিকেলে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে তিনি অসুস্থতা বোধ করেন। তাকে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান।



মন্তব্য করুন