‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ, হতাহত অনেক
ছবি : সংগৃহীত
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তারা। ঘটে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নি সংযোগের ঘটনাও। এসব ঘটনায় ঢাকাসহ সারা দেশে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ১২ জনই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।
পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে উত্তরা-আজমপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে শিক্ষার্থী-পথচারীসহ চারজন নিহত হন। আহত হন আরও শতাধিক মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট মিজানুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে উত্তরা-আজমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুজন নিহতের খবর পাওয়া যায়। তাদের একজন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং আরেকজন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, সাভারে এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারী ও মাদারীপুরে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীতে কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষে এক স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। বিকেলে ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে ওই স্কুল ছাত্র নিহত হয়। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল ও ছড়রা গুলিতে শতাধিক ছাত্রজনতা আহত হয়েছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
এক দফা দাবি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অবরোধ করছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অবরোধের কারণে শিববাড়ি মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, রূপসা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পাবনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন মিছিলকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাটে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন।
কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নাটোর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশ সুপারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
টাঙ্গাইলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিকসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শহরে থমথম অবস্থা বিরাজ করছে।
শাটডাউন কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সড়কে সব ধরনের যান চলাচল। একই অবস্থা নগরীর মার্কেটগুলোর।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে গত রোববার মধ্যরাত থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ। এরপর সোম, মঙ্গল ও বুধবার টানা তিনদিন সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। আন্দোলন দমাতে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগও মাঠে নামে। এতে সোমবার ও মঙ্গলবার সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মঙ্গলবার একদিনেই ৩ শিক্ষার্থীসহ ৬ জন মারা যান। প্রতিটি হত্যার বিচার দাবিতে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
মন্তব্য করুন