পূজার মঞ্চে ইসলামি গান, বিতর্কের ঝড়
পূজার মঞ্চে ইসলামি গান
দুর্গাপূজা – হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জেএম সেন হলের মণ্ডপে প্রতিবারের মতো এবারও ছিল উৎসবের জৌলুস। তবে, এই আনন্দঘন মঞ্চেই ঘটল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলল তীব্র বিতর্কের ঝড়। পূজার মঞ্চে ইসলামী গান পরিবেশন করে ছয় যুবক, আর এই ঘটনা উস্কে দিল নতুন আলোচনার।এই ঘটনায় কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, পূজা উদযাপন চলাকালীন
মঞ্চে ছয়জন যুবক ওঠে মাইক্রোফোন হাতে। তারা ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য নিয়ে গান গাইতে
শুরু করে। তাদের গানে উঠে আসে ‘বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব’ – এমন কিছু লাইন। মণ্ডপে উপস্থিত
মানুষজন প্রথমে চমকে গেলেও কেউ কেউ ভাবতে থাকেন, কীভাবে এই ধরনের গান পূজার মঞ্চে গাওয়া
সম্ভব? অবাক হয়ে, উপস্থিত দর্শকরা ঘটনার ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়
সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওটি ভাইরাল হতেই বিভিন্ন মহল থেকে
শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। হিন্দু ধর্র্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক
গোষ্ঠী এই ঘটনাকে অবমাননা হিসেবে দেখছেন। পূজা মণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশন নিয়ে বিতর্ক
শুধু পূজা উদযাপন কমিটি নয়, চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতির ভবিষ্যত নিয়ে
নতুন প্রশ্ন তুলেছে।”
এই ঘটনার জন্য পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ
সম্পাদক সজল দত্তকে দায়ী করা হয়েছে। জানা গেছে, সজল দত্ত যুবকদের মঞ্চে উঠতে অনুমতি
দিয়েছিলেন, তবে এই সিদ্ধান্ত তিনি এককভাবে নেন। পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য
বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়নি এই ঘটনার আগে, আমরা একে কঠোরভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।’ এ কারণে
সজল দত্তকে কমিটি থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক তুঙ্গে ওঠার
পর, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে গ্রেফতার
করা হয়েছে, যারা স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এবং পুলিশ
বলছে, এই ঘটনার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তা তদন্ত
করা হচ্ছে।”
এই ঘটনার পর, বৃহস্পতিবার রাতে জেএম সেন
হলের মণ্ডপে কয়েকশো হিন্দু ভক্ত বিক্ষোভ করেন। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে
পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেন এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস
দেন।”
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম
নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দিন বলেন, পূজা মণ্ডপের অনুষ্ঠানে ইসলামি
গানের কিছু মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছে। আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার
পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির দেশ হিসেবে
পরিচিত বাংলাদেশে, চট্টগ্রামের এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ধর্মীয় স্পর্শকাতরতা
কতটা গভীর। পূজার মণ্ডপে এই ধরনের ঘটনা সকলের জন্যই একটি শিক্ষণীয় মুহূর্ত হতে পারে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও দেখিয়ে দেয়
এই বিতর্ক।
মন্তব্য করুন