মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ১২ নং স্প্যান (ভিডিও)
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ছবি : ঢাকা ওয়েভ
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ শতবর্ষেও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে সগৌরবে। পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীর উপরে ১৯১৫ সালে ৪ মার্চ অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ এই ব্রিজের উদ্বোধন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে ভেঙে গিয়েছিল ব্রিজের ১২ নং স্প্যানটি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে এই সেতুর কাছাকাছি স্থানে বাঙালি মুক্তিকামী যোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আর সেই সময়ে ভারতীয় মিত্র বাহিনী যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা ফেলে হয় সেতুর উপরে। আর সেই ব্রিজের ১২ নং গার্ডার ভেঙে যায় সেদিন। দুই পাড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করতে পেরেছিল।
তাইতো এই ব্রিজ যেমন দুই পাড়ের মানুষের রেল যোগাযোগের অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনারা তাদের রসদ ও সেনা সদস্যদের দেশের বিভন্ন স্থানে পাঠাতে ব্যবহার করতো রেলগাড়ি। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সাথে রেল পারাপারের একমাত্র পথ ছিলো এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
১৫টি স্প্যানের উপর নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ১৯০৯ সাল থেকে নির্মাণ কাজ শুরু চলে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত। ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১৭৯৮.৩২ মিটার বা ১.৮ কি. মি.। তৎকালীন সময়ে ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ব্রিজটির নকশাকার ছিলেন আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল।
বিজয়ের ঠিক দুইদন আগে সারাদেশে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন শুরু করেছে। ঠিক তখন মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা ফেলে হয় পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর উপরে। এই বোমার আঘাতে সেদিন সেতুর ১২ নং গার্ডার ভেঙে যায়। আর বেশ কিছু গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সেদিন এই বোমা ফেলা হয়েছিল বলে জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ফেলা বোমার ধ্বংসাবশেষ। ( ছবি : ঢাকা ওয়েভ)
দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালে ভারত সরকার সেতুর ১২ নাম্বার গার্ডারের অনুরুপ আরকেটি স্প্যান পুনরায় স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত আর শতবর্ষের গৌরব নিয়ে আজো পদ্মার বুকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে হার্ডিঞ্জ সেতু। সেদিনের সেই বোমার অংশ বিশেষ সংরক্ষণ করে রাখা আছে পাকশী রেলওয়ে সদর দপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে।
মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি বিজড়িত এই বোমার অংশ দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এখানে। তাই এই ব্রিজ একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান, অন্যদিকে বৃটিশ স্থাপনার উপমাদেশের অন্যতম নিদর্শন। তাই ব্রিজের সকল স্থাপনা টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ পুরো পাবনাবাসী।
ভিডিওতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ-
মন্তব্য করুন