সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাব-রেজিস্ট্রারের বেতন ৩০ হাজার, গাড়ি ভাড়া দেন ৪০ হাজার!

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
২ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:২৮ |আপডেট : ৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০৫
সাব-রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন শিকদার ও তার ব্যবহৃত গাড়ি।
সাব-রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন শিকদার ও তার ব্যবহৃত গাড়ি।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অফিসিয়াল কোন গাড়ি নেই। তাতে কি, টাকা থাকলে তো আর গাড়ির অভাব হওয়ার কথা না! এখানেও তা ই হয়েছে। অফিসের রেওয়াজে এ কর্মকর্তা আসা-যাওয়া করেন বিলাসীভাবে।

হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, শৈলকুপার সাব-রেজিস্ট্রার ৯ম গ্রেডে মূল বেতন পান ৩০ হাজার ৯৯০ টাকা। তবে তার প্রতিমাসে ব্যবহৃত রেন্ট-এ-কারের ভাড়া মেটাতে হয় ৪০ হাজার টাকা! তাহলে বাকি টাকা আসে কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন ঘুকপাক খাচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অলিগলিতে। তবে সাব-রেজিষ্টার বলছেন, প্রাইভেট কারে অফিসে আসা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আর জেলা রেজিস্ট্রার বলছেন, একজন নারী কর্মকর্তার পাবলিক বাসে অফিসে আসা যাওয়া সমস্যা।

বলছিলাম ঝিনাইদহের শৈলকুপার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কথা। অফিসের এক কর্মচারীর সাথে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে আসা-যাওয়ার প্রাইভেট কার নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, স্যার নিজেই এ ভাড়া মিটিয়ে থাকেন। যে ব্যক্তিগত গাড়িতে তিনি আসা-যাওয়া করেন সেই রেন্ট এ কারের প্রতি মাসের ভাড়া ৪০ হাজার টাকা ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবারেও (২৯ নভেম্বর) সাব-রেজিস্ট্রার ঢাকা মেট্রো গ ২১-৩৪৯৪ নাম্বারের একটি গাড়িতে ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে শৈলকুপার অফিসে আসেন। গাড়ির ড্রাইভার আলিম হোসেন জানান, এটা সাব-রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত না ভাড়া গাড়ি তা তিনি জানেন না। তাকে আসতে বলা হয়েছে বলে তিনি এসেছেন।

শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মইনুদ্দিন হোসেন বলেন, প্রতিদিন যে দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে দলিল মূল্যেও ১% টাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আলাদাভাবে জমা দিয়ে থাকেন তারা। দলিল থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে তিনি প্রাইভেট ভাড়া ৪০ হাজার টাকা মিটিয়ে থাকেন। এসব নিয়ে দলিল লেখকদের সাথে মন-মালিণ্যে রোববার থেকে কর্ম বিরতিতে যান সমস্ত দলিল লেখক।

দলিল লেখক মকবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারি কোন গাড়ি না থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার আসেন প্রাইভেট কারে। আর এ ভাড়ার টাকা যায় প্রতি দলিলের ১% টাকা থেকে

সাব-রেজিস্ট্রার রেন্ট এ কারে অফিসে আসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাব-রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন শিকদার বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আর ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করা ভালো। তার থেকে কোন তথ্য নিতে হলে তথ্য আইনে দরখাস্ত করতে হবে।

আর অফিসের অচলাবস্থা নিয়ে বলেন, আক্তারুজ্জামান নামের এক দলিল লেখককে আচরণগত কারণে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা অন্যভাবে প্রবাহিত করতে দলিল লেখকরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সাব-রেজিস্ট্রার ব্যক্তিগত গাড়িতে অফিসে আসা নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সরকাররি কোন পরিবহন বরাদ্দ নেই। একজন নারী কর্মকর্তা পাবলিক বাসে অফিসে আসা সমস্যা। এ কারণে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে অফিসে আসা যাওয়া করেন।



মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর
এই বিভাগের আর খবর