শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন ভূতে বিশ্বাস করে মানুষ?

অনলাইন ডেস্ক
১৯ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৪ |আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১ ০০:৩২
সংগৃহীত
সংগৃহীত

আমরা কেন ভয় পাই? মানুষ কেন ভূতে বিশ্বাস করে? এ কারণগুলো অনেকেরই অজানা। বিজ্ঞান কি বলছে প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা হিসেবে? সেটা ব্যাখ্যা করতেই এ আলোচনা।

হ্যালি স্টিভেন্স একজন অতি-প্রাকৃতিক ঘটনা অনুসন্ধানী। তিনি ২০০৬ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের এক শপিংমল নিয়ে ভুতুড়ে ঘটনা শুনেছিলেন। ঘটনাটি শোনার সঙ্গেসঙ্গেই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে বেড়িয়ে যান। তিনি একা পুরো শপিংমল খুঁজেও কোনো ভুতুড়ে কার্যকলাপ না পেয়ে যখন হতাশ হয়ে ফিরে আসছিলেন, ঠিক তখনই একটি আওয়াজ পেলেন। শব্দটি এসেছিল একটি দোকানের কাঁচের জানালা থেকে, যেন কেউ সে জানালাটিতে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করেছে।

কিন্তু কে করবে আঘাত? শপিংমল বন্ধ, ভেতরে হ্যালি একাই। হ্যালি সেদিন সারারাত ঘটনাটির যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করলেন। তিনি জানতে পারলেন, ১২ শতকে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের তৈরি প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষের ওপর তৈরি হয়েছে শপিংমলটি। এছাড়াও তিনি জানতে পারলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা শপিংমলের আশেপাশে খনন কাজ চালিয়ে কিছু পুরনো কবরস্থান খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করতে ব্যর্থ হলেন। তিনি বললেন, ‘আমি নিশ্চিত করে জানি না কি ঘটেছিল।’

এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে এবং অনেক ঘটনাই ঘটছে যা ২১ শতকে এসেও ঘটনাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

পশ্চিমা বিশ্বের মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা কমছে এবং অতি-প্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাস বাড়ছে। অপরদিকে বিজ্ঞানের অগ্রসর এসব দেশে আধি-ভৌতিকে আস্থা বাড়াচ্ছে মানুষের।

একটি জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন ভূত বা প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করেন। ব্রিটেনেও চিত্রটা একই রকম, কোনো ঐশ্বরিক সত্ত্বায় বিশ্বাস না করলেও সিংহভাগ ব্রিটিশ ভূত বিশ্বাস করেন।

কিন্তু কেন মানুষ ভূত বিশ্বাস করছে? এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও কম হচ্ছে না। বিজ্ঞান ভূত বিশ্বাস করার বিষয়টিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেয় না।

লন্ডনের গোল্ডস্মিথ কলেজের সাইকোলজি ইউনিটের পরিচালক ও মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চ এ বিষয়ে বলেন, ‘একটা সময় প্রকৃতির নানা বিপদ থেকে আমাদের আত্মরক্ষায় কোনো উপায় ছিল না। তাই অজানা-আকস্মিক বিষয়কে আমাদের মস্তিষ্ক বিপদ হিসেবে ভুল করে শনাক্ত করে এবং ভয়ের সংকেত পাঠিয়ে থাকে।’

তিনি ইসরাইলি-মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কানেম্যানের একটি তত্ত্ব তুলে ধরে আরও বলেন, ‘আমাদের চিন্তা করার দুটি ধারা আছে। একটি ধারা হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল। এই প্রক্রিয়ায় আমরা তাৎক্ষণিক যে কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি, যার কারণে অধিকাংশ ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। দ্বিতীয় ধারাটি হচ্ছে অনেক ধীর গতির। তবে দ্বিতীয় ধারাটিতে, বেশিভাগ ঘটনারই সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়ে থাকে।’

কথাটির ব্যাখ্যা দিতে ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চ বলেন, ‘প্রস্তর যুগে আগে যখন মানুষ গুহায় বসবাস করত তখন ঝোপঝাড় থেকে হঠাৎ কোনো শব্দ শুনলে তারা তাৎক্ষণিক ধরে নিতো, কোনো বন্যপ্রাণী শিকারের জন্য ওঁতপেতে রয়েছে। ফলে তাৎক্ষণিক সে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হতো। কিন্তু সে যদি চিন্তার দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতো তাহলে হয়তো সে বন্যপ্রাণীটির শিকারে পরিণত হতো। এভাবে আদিকাল থেকে প্রক্রিয়াশীল চিন্তাধারার কারণে সম্ভাব্য শিকারী প্রাণীর হাত থেকে বেঁচেছে মানুষ। প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাশক্তি এখানে অগ্রিম সর্তকতা হিসেবে কাজ করে এবং যেহেতু এখানে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেহেতু কোনো ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা হওয়াটা সহজাত কারণেই হয়।’



মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর
এই বিভাগের আর খবর