রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাদা পোশাকে ছয়জন তুলে নিয়ে যায় তিন সমন্বয়ককে

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ জুলাই ২০২৪ ২৩:১৯ |আপডেট : ২ আগস্ট ২০২৪ ০০:০৫
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বকর মজুমদারকে সাদা পোশাকে ছয়জন তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন নাহিদের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি এ কথা জানান।

সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে এক পোস্টে এএফপি তিন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়ার তথ্য জানায়। রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই তিন সমন্বয়ক। সেখান থেকে বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে গেছে বলে এএফপি-কে জানিয়েছেন হাসপাতালটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সুপারভাইজার আনোয়ারা বেগম লাকি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই তিন শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দিতে চায়নি। কিন্তু পুলিশ একপ্রকার চাপ দিয়েই তাদের তুলে নিয়ে গেছে।

নাহিদের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম এএফপিকে জানান, সাদা পোশাক পরা গোয়েন্দা সংস্থার ছয় ব্যক্তি তাদের তিনজনকে তুলে নিয়ে যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন নাহিদ, আসিফ ও আবু বকর।

এএফপির খবরে আরও বলা হয়, চিকিৎসাধীন তিনজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তাদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এর আগেও তাদের তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন।

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। এএফপি আরও বলছে, শুক্রবার তাদের তুলে নেওয়ার বিষয়টিও কেউ স্বীকার করেননি।

এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের ওপর কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। পাশাপাশি তাদেরকে কেবিনে অবরুদ্ধ এবং হাসপাতালের ওয়াই-ফাই ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। দেশের জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জানান, চার দিনের আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সেখান থেকেই তারা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাতে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নাহিদ ও আসিফের কক্ষের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সদস্য পাহারা দিচ্ছেন।

সমন্বয়কদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালে যান এবং নাহিদ ও আসিফকে তাদের কেবিনে অবরুদ্ধ করে রাখে। পাশাপাশি হাসপাতালের ওয়াই-ফাই ও টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ কারণে তারা সময়মতো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারেননি।

অথচ এদিন বিকেলে আসিফ মাহমুদের গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আসিফ তিনি ফোন করে জানান, তিনি ও নাহিদ হাসপাতালে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাসপাতালের ওয়াই-ফাই ও টেলিফোন লাইন কেটে দিয়েছে। এ কারণে তারা অপর সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সেইসঙ্গে হাসপাতালেই রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে একটি প্রেস ব্রিফিং করবেন বলেও জানান। তবে ওইদিন রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে কোনো প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি দেখা যায়নি।

দ্য ডেইলি স্টারের ওই প্রতিবেদন বলছে, ওইদিন রাতে হাসপাতালের সপ্তম তলায় নাহিদের কেবিনের সামনে তিনজন ও তৃতীয় তলায় আসিফের কেবিনের সামনে চারজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে সাদা পোশাকে দেখা যায়। তারা নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদককে কেবিনে প্রবেশ করতে দেননি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনা আছে বলেও জানান তারা।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সংবাদ ব্রিফিং করতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নাহিদ ও আসিফের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। পরে আমরা হাসপাতাল থেকে চলে আসি।

আর নাহিদ ইসলামের বলেন, হাসপাতালের বাইরে অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছেন। কাউকে ভেতরে ঢুকতে বা বের হতে দিচ্ছেন না। বিকেলের পর থেকে ইন্টারনেট সংযোগও পাচ্ছি না।

এর আগে গত শনিবার ভোরে রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে নাহিদ ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরদিন রোববার তাকে পাওয়া যায়। এ সময় তার বাম উরু ও কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা ও গভীর ক্ষত ছিল। অন্যদিকে শুক্রবার আসিফ মাহমুদ অপহরণ হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পাঁচ দিন পর তাকে পাওয়া যায়।



মন্তব্য করুন