কোটা আন্দোলনে পরামর্শদাতা ‘ইন্টেলেকচুয়াল এক তরুণ’ গোয়েন্দা নজরে
ছবি : সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় সরকার দেড়শ মৃত্যুর তথ্য জানালেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ সংখ্যা দুই শতাধিক বলে দাবি করা হয়েছে। আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি মানুষ। মেট্রোরেল স্টেশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবনসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় নাশকতার পেছনে প্রধানত কারা জড়িত ও কারা উসকানি দিচ্ছে— বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বা ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে দেখেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। খোঁজ চলছে ‘ইন্টেলেকচুয়াল এক তরুণেরও।’
এ বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এই সহিংসতার পেছনের মূল হোতা তারেক রহমান। তার পরিকল্পনা সরকার উৎখাতের। জামায়াতও যুক্ত হলো। বাম, ডানও একত্র হলো। জামায়াত নিষিদ্ধের পর রিঅ্যাকশনটাও দেখা গেলো।’ চলমান পরিস্থিতি রাজনৈতিক ও আইনগত দুইভাবেই মোকাবিলা করা হবে। শনিবার থেকে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগও।
একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে পেছন থেকে একজন ‘ইন্টেলেকচুয়াল তরুণ’ গভীরভাবে আন্দোলনে যুক্ত” বলে তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই তরুণের সঙ্গে একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক ও দেশের খ্যাতনামা একজন চিন্তকের যুক্ততাও গভীরভাবে খুঁজে দেখা হচ্ছে।
অনুসন্ধান অব্যাহত থাকায় গোয়েন্দাসূত্রটি ওই তরুণের নাম ও পরিচয় জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে আভাস পাওয়া গেছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে কয়েকজন জানিয়েছেন, ‘সম্ভাব্য এই তরুণ ইন্টেলেকচুয়াল ছাত্রজীবনে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘ছাত্রশিবিরের’ সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মনোযোগী হন, করেন সিনেমা বিষয়ক ম্যাগাজিনও। তার বাবা চট্টগ্রাম বিভাগের বিএনপির একটি দায়িত্বশীল পদে নিযুক্ত। তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটিতে ছিলেন, বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির একাধিকসূত্র জানায়, বর্তমানে গ্রেফতার, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ‘ইন্টেলেকচুয়াল ওই তরুণের’ পরামর্শেই ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদের স্মরণে ‘আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ’ নির্মাণ করেছিলেন। ওই স্তম্ভটির ডিজাইনারও ছিলেন ‘ইন্টেলেকচুয়াল ওই তরুণ’।
চলমান আন্দোলনের কর্মসূচির নামকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ওই ‘ইন্টেলেকচুয়াল তরুণের’ ভূমিকা রয়েছে, বলে জানা গেছে বিশ্বস্তসূত্রে।
আবার আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে না থাকলেও কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন। তিনি সমন্বয়ক প্যানেলে না থাকলেও আন্দোলনকারীদের নানা পরামর্শ দিতেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় বলে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়।
এদিকে, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের নাম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ -বিবিএ। আন্দোলন চালিয়ে নিতে গত ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি দেয় শিক্ষার্থীরা। কমিটিতে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক রয়েছেন। এই কমিটির সদস্যদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ‘অনুসন্ধান’ অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন