শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাবির দোকান ক্যান্টিনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বাকি ৮ লাখ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৭ |আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫১
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অভ্যন্তরে হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, পত্রিকার হকার এবং আশপাশের বিভিন্ন দোকান, হোটেলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকি প্রায় আট লাখ টাকা। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে এসব দোকান এবং হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন থেকে বাকি খেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ডাইনিং ক্যান্টিন মালিকদের অভিযোগ, বাকি খেয়ে তো টাকা দিতই না, আবার তাদের খাবার দিতে দেরি হলে ক্যান্টিনের ওয়েটারদের উলটো ধমক দিতেন। এমনকি কোনো সমস্যা হলেই ডাইনিং থেকে বের করে দেবে বলেও হুমকি দিতেন। 

জানা যায়, আবাসিক শাহপরান হলের ডাইনিং এবং ক্যান্টিনে বিভিন্ন সময়ে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের বাকি যথাক্রমে ত্রিশ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা। হলের ডাইনিংয়ের সাবেক একাধিক পরিচালকের কাছে গত ৮ বছরে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে বাকি যথাক্রমে দুই লক্ষাধিক এবং দেড় লক্ষাধিক টাকা। হলটির সামনের ছোট হোটেল, লন্ড্রি, সেলুন এবং ছোট দোকানটিতেও ছাত্রলীগ নেতাদের বাকি প্রায় ৩৫ হাজারের কাছাকাছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিংয়ে বাকি প্রায় ৩ হাজার টাকা এবং ক্যান্টিনে গত দুই বছরে বাকি ৯০ হাজার টাকার অধিক। সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ডাইনিংয়ে বাকি ৫ হাজার টাকা। হলটির ক্যান্টিনের সাবেক পরিচালকের কাছে বাকি প্রায় ৫ হাজার টাকার ওপর। এছাড়া একই হলসংলগ্ন খাবার দোকান ও শাহপরান হলসংলগ্ন টং দোকান পরিচালক জসিম উদ্দিনের কাছে তাদের বাকি লক্ষাধিক টাকা। বাকি খাওয়া নেতাদের নাম হল কর্তৃপক্ষকেও বিভিন্ন সময়ে অবগত করেছেন এসব একাধিক ডাইনিং ও ক্যান্টিনের পরিচালক।

শাবির প্রধান ফটকসংলগ্ন রেস্টুরেন্ট ও দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাবি ছাত্রলীগ নেতাদের নামে বাকি প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে খলিলুর রহমান এবং তার অনুসারীরাও সেসব রেস্টুরেন্টে খেয়ে বিল খলিলুর রহমানের নামে লিখে রেখে চলে যেতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন টং দোকানে এবং হলগুলোতে পত্রিকা বিলি করা হকারের কাছেও ছাত্রলীগের চল্লিশ হাজারের অধিক টাকা বাকি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নয়াবাজার এলাকা এবং টিলারগাঁও এলাকার প্রায় বড় দশটির অধিক দোকানে খোঁজ নিয়ে চল্লিশ হাজারেরও বেশি টাকা বাকি বলে তথ্য পাওয়া গেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। 

সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ডাইনিং পরিচালক সিদ্দিক মিয়ার দুটি কিডনি বিকল হয়ে হাসপাতালে। অর্থাভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। হলটির সম্মুখে অবস্থিত খাবার দোকানের মালিক জসিম মিয়াও স্ট্রোকজনিত কারণে চিকিৎসাধীন। তিনিও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অথচ তাদের খাবার দোকানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা বাকি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ একাধিক পদধারী নেতা, বর্তমান সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান, সহসভাপতি মামুন শাহ এবং যুগ্ম সম্পাদক সুমন মিয়ার অধিকাংশ অনুসারীরাই এসব দোকানগুলো থেকে বিভিন্ন সময়ে বাকি খেয়ে টাকা পরিশোধ করেননি। তাদের মধ্যে সাবেক সভাপতি সঞ্জীব চক্রবর্তী পার্থ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন থেকে শুরু করে বর্তমান সভাপতি খলিলুর রহমান, সহসভাপতি রেজাউল হক সিজার, আশিকুর রহমান আশিক, সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন দোকানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বাকির অভিযোগ রয়েছে। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্রসেন হত্যা মামলার আসামি। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন একাধিকজন।

দোকানিদের অভিযোগ, সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাদের পাওনা টাকার জন্য কল দিলে তারা আমাদের চেনেন না বলে ফোন কেটে দেন। এদিকে বাকি খাওয়া ও ফাউ খাওয়ার এসব অর্থ ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন দোকানিরা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি। এছাড়া শাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিয়মিত ছাত্র হলে তাদের থেকে প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।



মন্তব্য করুন