দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা
দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা
জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ শহিদ হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক রয়েছেন। তাদেরই একজন শহিদ গোলাম নাফিজ। তিনি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪ আগস্ট বিকালে ফার্মগেটের পথচারী-সেতুর
নিচে গুলিবিদ্ধ হন নাফিজ। ‘বেঁচে থাকলে আরও দুইটা গুলি কর’- গুলিবিদ্ধ গোলাম
নাফিজকে ড্রেন থেকে রিকশায় তোলার সময় বলছিলেন এক পুলিশ সদস্য। মুমূর্ষু নাফিজকে পাশের
হাসপাতালে নেওয়া হলে দরজা থেকে ফিরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চিকিৎসা পেলে
হয়তো প্রাণে বাঁচত, সেই আফসোসে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছে নাফিজের পরিবার।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পুলিশ যখন রিকশার পা-দানিতে তুলে দেয়, তখনো নাফিজ
রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলেন। নাফিজ নয়, যেন রিকশার পাদানিতে ঝুলছিল এক টুকরো
বাংলাদেশ। ১৭ বছরের নাফিজের বুলেটবিদ্ধ দেহ, রক্ত ঝরে ঝরে নিথর হলেও মাথা থেকে খসে
পড়েনি দেশের পতাকা। যে ছবিটি কাঁদিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশকে।
নাফিজের সেই ছবিটি আবার দেশবাসীকে কাঁদাল। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে
‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক এক আলোচনা
সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শহিদ নাফিজের মা নাজমা আক্তার। এ সময় ছেলের
ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের ছবি স্পর্শ করে বিলাপের একটি হৃদয়স্পর্শী ভিডিও
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওটি ছেলে হারানোর শোক আবার পুরো বাংলাদেশের
মানুষকে কাঁদিয়েছে।
ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল
কাদের বলেছেন, ‘আমরা তো এখনো বেঁচে আছি, মা! আপনার সন্তান জীবন দিয়ে
গেছে, যেই বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে জীবন দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবয়ন না হওয়া পর্যন্ত
আমাদের লড়াই চলবে আমৃত্যু। যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,
আপনাদের হাহাকার ঘুচাবোই- ইনশাআল্লাহ’।
আব্দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে মোহাম্মদ সোহেল বলেন- ইনশাআল্লাহ জনগণ আপনাদের
পাশে আছে; ক্ষমতার লোভে নেতারা ভুলে যেতে পারে, এই দৃশ্য আমরা কিভাবে ভুলব যা চোখে
দেখেছি।
শারমিন মুক্তি লেখেন- নতুন করে শুরু করতে হবে। বিপ্লবী সরকার গঠন করতে
হবে।
আরএইচ ইউসুফ লেখেন- যাদের আওয়ামী লীগকে লাগবে আমরা তাদের বয়কট করব।
এমআর জামসেদ বলেন- সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে শহিদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে
হবে।
মাইনুল ইসলাম লিখেছেন, শহিদ নাফিজের মা পুরো জাতির মা।
নির্মাতা আশফাক নিপুন বলেছেন- ‘This is
heartbreaking! জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ নাফিজের মা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ
করছেন ছেলে হত্যার বিচার যেন উনি পান! নাফিজ এবং নাফিজের মতো হাজারও শহিদের খুনিদের
বিচার অবশ্যই হতে হবে, যেই ক্ষমতায় থাকুক আর আসুক না কেন!’
ছেলের ছবি ছুয়ে দেখছেন শহিদ গোলাম নাফিজের মা- এমন একটি ভিডিও শেয়ার
করে নাফিজ বাশার আলিফ বলেন- ‘আমি জনম জনম রাখবো ধরে ভাই হারানোর জ্বালা!'
মন্তব্য করুন