যে কারণে জমজ সন্তান হয়ে থাকে
জমজ শিশুকন্যা
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, গত ৪০ বছরে জমজ সন্তান জন্মের হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জমজ সন্তান নিয়ে অনেক প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। জমজ সন্তান জন্মকে অনেকে অনেক ভাবে ব্যাখ্যা করেন। যদিও এখন পর্যন্ত এর বৈজ্ঞানিক কারণ জানা যায়নি। তবে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যার ফলে একজন নারী জমজ সন্তান প্রসব করে থাকেন।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কেন জমজ সন্তান হয়? কী কী করলে একজন নারীর জমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা বাড়ে কিংবা এই ধরনের গর্ভধারণে মা ও শিশুর ঝুঁকিই বা কী কী?
কেন হয় জমজ সন্তান?
ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বুঝতে পারেননি ঠিক কী কারণে জমজ সন্তান হয়। তবে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা একজন নারীর জমজ সন্তান গর্ভে ধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেন। যেমন, নারীর বয়স, বংশানুক্রমিক ধারা ও প্রজনন চিকিৎসা।
মার্কিন সংবাদপত্র ‘মেডিকেল নিউজ টুডে’ তে বলা হয়, একজন নারীর জরায়ুতে দুইটি ডিম্ব কিংবা একটি ডিম্ব থেকে দুইটি ভ্রূণ সৃষ্টি হলে জমজ সন্তান হতে পারে।
দুই ধরনের জমজ রয়েছে। আইডেন্টিকাল ও নন-আইডেন্টিকাল বা ফ্রেটার্নাল।
আইডেন্টিকাল টুইন জরায়ুতে একটি ডিম্ব থেকে দুইটা ভ্রূণ গঠন হলে এই ধরনের জমজ সন্তান হয়। এই ধরনের শিশুরা একই লিঙ্গের হয়ে থাকে। তার মানে হলো ছেলে-ছেলে বা মেয়ে-মেয়ে।
আর জরায়ুতে দুইটা ডিম্ব উৎপাদন হলে নন-আইডেন্টিকাল টুইন হয়ে থাকে। এরা আইডেন্টিকাল টুইনের বিপরীত। এরা একই লিঙ্গের হয় না।
কী করলে জমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়?
অনেক কারণে একজন নারী জমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করতে পারেন। যেমন_
বংশানুক্রমিক ধারা
পরিবারে কারও জমজ সন্তান থাকলে ওই নারীর জমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পিতার থেকে মাতার দিক দিয়ে এই সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের গর্ভধারণ প্রজনন চিকিৎসা ছাড়া হয়ে থাকে।
প্রজনন চিকিৎসা
‘মেডেক্যাল নিউজ টুডে’ তে বলা হয়, প্রধানত সন্তান জন্ম দেবার প্রজনন চিকিৎসা গ্রহণের ফলে জমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি। বিভিন্ন ধরনের প্রজনন চিকিৎসা এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
বেশ কিছু প্রজনন ওষুধ রয়েছে যা গ্রহণে ফলে একজন নারী একাধিক ডিম্ব উৎপাদন করেন। যদি দুইটি ডিম্বই নিষিক্ত হয় তাহলে জমজ সন্তান হয়ে থাকে।
বয়স
যুক্তরাষ্ট্রের নারী স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, ৩০ বছরের উর্ধ্বে নারীরা সাধারণত বেশি জমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করে থাকেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, এই বয়সের নারীরা তাদের থেকে কম বয়সী নারীদের থেকে বেশি ডিম্ব উৎপাদন করে থাকেন।
উচ্চতা ও ওজন
নারীর উচ্চতা ও বয়স জমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার আরেকটি কারণ। লম্বা ও অধিক ওজনের নারীদের ক্ষেত্রে নন আইডেন্টিকাল টুইন জন্ম দেওয়ার হার বেশি। যদিও এর কারণ স্পষ্ট না। তবে ধারণা করা হয়, এর পেছনে তাদের ভালো পুষ্টি কাজ করে যা ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহয়তা করে থাকে।
জাতি
জমজ সন্তান জন্ম দানে জাতিগত বৈশিষ্ট্যও একটি উপাদান। সাধারণত এশীয় নারীদের থেকে অ্যাফ্রিকান নারীদের জমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার হার বেশি।
আমাদের সমাজে একটি কুসংস্কার আছে যেখানে বলা হয় জোরা ফল খেলে জমজ সন্তান হয়। কিন্তু স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. রাতু রোমানা জানান, জোড়া কলা খেলে নাকি জমজ বাচ্চা হয়। এটা নিছকই ভুল ধারণা।
এবার
চলুন জেনে নেওয়া যাক জমজ সন্তান গর্ভধারণে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো।
প্রসবকালীন মায়ের যা যা সমস্যা হতে পারে
১। মা এবং বাচ্চা দুজনের শরীরেই কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।
২। প্রি টার্ম ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেক সময় মায়ের মৃত্যুও হতে পারে।
৩। মায়ের শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ব্লাড প্রেসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।
৪। ডেলিভারির পর রক্তস্রাব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাচ্চার যে যে সমস্যা হতে পারে-
১। অপরিণত শিশু।
২। বাচ্চার ওজন কম হওয়া।
৩। নানা ধরনের জন্মগত ত্রুটি।
৪। জন্মের সময় কিছু কিছু বাচ্চার মৃত্যুও হয়।
এইসব সমস্যার চিকিত্সা-
১। মাকে পরিমাণ মতো বিশ্রাম নিতে হবে।
২। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৩। শরীরে অ্যানিমিয়ার সমস্যা যাতে না হয় তার জন্য শরীরে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
৪। আর
অবশ্যই ভালো কোন হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে হবে।
মন্তব্য করুন