সফল নারী উদ্যোক্তা নাহিদার পথচলার গল্প
সফল নারী উদ্যোক্তা নাহিদা আক্তার
পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছেন। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন।
তেমনি একজন উচ্চতর শিক্ষিত নাহিদা আক্তার। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছে শক্তিই তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শীর্ষে। চাকরি পিছনে না ছুটে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সামান্য পুঁজি নিয়ে নেমেছিলেন অনলাইন প্লাটফর্মে। স্বামীর প্রেরণা আর মা-য়ের উৎসাহে আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা হিসাবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। পেয়েছেন সম্মাননা পদক। পণ্যের মান রক্ষায় তার নিরলস প্রচেষ্টা, আর সেজন্যই আজ ক্রেতাদের মাঝে করে নিতে পেরেছেন বিশ্বস্ততার বিশেষ স্থান।
ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন তিনি। যেহেতু স্টুডেন্ট হিসেবে ভালো ছিলেন, তাই তার উপর পরিবারের প্রত্যাশাও ছিলো একটু বেশি। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করার পর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। তবে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে হয় নাহিদার, আর সেখানেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্নটাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবুও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। কিন্তু বাড়ীর বউ হিসেবে বাইরে জব করার অনুমতি ছিলো না। একপর্যায়ে কলেজে জব (চাকরী) করার অনুমতি মিললেও ভাগ্যটা তার সহায় ছিলো না। ২০২০ সালে করা ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের আবেদনটি আজও ঝুলে আছে। পরীক্ষার ডেট (তারিখ) পড়েনি এখনও।
চাকরির আশা বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছেন তিনি। পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর মেধাকে পুঁজি করে পা বাড়ান নাহিদা আক্তার। সাফল্য একদিন আসবে এমন আশায় বুক বেঁধে নেমে পড়েন অনলাইন প্লাটফর্মে। এই এগিয়ে চলাই আজ তাকে অদম্য একজন নারী হিসেবে দাঁড় করেছেন এই সমাজে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ স্বাবলম্বী উদ্যোক্তা নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।
পথচলা যেভাবে শুরু : ২০২০ সালের শেষের দিকে সামাজিক মাধ্যমে দেখা পান ÒWomen and E Commerce Trust (WE)Ó এর পেজ। সেখানে মানুষের পোস্টগুলো নিয়মিত পড়তে থাকেন তিনি। মুগ্ধ হতে থাকেন বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্পগুলো পড়ে। এভাবে ক্রমশ নিজের ভেতর বাসা বাঁধতে থাকেন নতুন স্বপ্ন।
উই প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে তিনিও তো চাইলে কিছু একটা করতে পারেন, এ দৃঢ় সংকল্প বাসা বাধে নাহিদার মধ্যে। এই ভাবনা ও উৎসাহ থেকেই উদ্যোক্তা হিসাবে নিজের প্রতিষ্ঠান “রূপ” নিয়ে যাত্রা শুরু, ফিরে তাকাতে হয়নি পিছনে। আর জীবনের এসব সাফল্যের গল্প শুনালেন জামালপুরের মেয়ে নাহিদা আক্তার। বর্তমানে তার কার্যক্রম চলছে ময়মনসিংহ থেকে।
পরিবারের সহযোগিতা, প্রেরনা ছাড়া জীবনে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয় নয় কখনো। প্রথম দিকে পরিবারের সবাইকে জানাননি নাহিদা। স্বামী আর তার মা শুধু জানতেন। এ দু’জন সম্মতি দেওয়ার পাশাপাশি সব ব্যাপারে সাপোর্টও করেছেন। মূলত স্বামীর সাপোর্ট ছিলো বলেই কাজটা শুরু করতে পেরেছিলেন তিনি।
সফল নারী উদ্যোক্তা নাহিদার সাফল্যের পিছনে ছিলেন আরেকজন মানুষ, যিনি তার পরম শ্রদ্ধার পাত্র এবং পিতৃতুল্য। শুরু থেকেই নাহিদাকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, সঠিক দিক নির্দেশনাসহ সব রকমের সাহায্য করে আসছেন। নারী উদ্যোক্তা নাহিদার ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে এগিয়ে যেতে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি।