রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের উন্নয়নে সরকারের অর্জন
লেবানন প্রবাসী বাবু সাহা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেদ সাথী ও ইতালি প্রবাসী ইসমাইল হোসেন স্বপন
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। একদিকে দারিদ্র্য আর জনসংখ্যার অস্বাভাবিক ঘনত্ব, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বেকার সমস্যা এ দেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু বিগত এক দশক ধরে এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সারা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। অর্থনীতির কিছু কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জন স্মরণকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। অপ্রতিরোধ্য এই অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য তিনটি মানদণ্ডের দুটি মানদণ্ড অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটিতেই সাফল্য লাভ করেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হাওয়া লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারি পূর্বে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ এর ঘরে। মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২১০০ ডলারের মতো। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর অগ্রগতি যে কয়টি খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রবাসীদের আয় বা তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স তার মধ্যে অন্যতম।
দেশের মোট জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। বিশ্বব্যাংকের ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের সেরা ১০ রেমিট্যান্স সরবরাহকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে নবম স্থানে। ২০১৯ সালে এই অবস্থানের এক ধাপ উন্নতি হয়ে অষ্টম স্থানে চলে আসে।
বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির আদ্যোপান্ত
বর্তমানে পৃথিবীর ১৭৪টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবস্থান করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় যত সংখ্যক মানুষ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ প্রবাসী হিসেবে কাজ করছে বিদেশে। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২৫ লাখের মতো। সরকারি হিসাবে যদিও এই সংখ্যা কিছুটা কম। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও সৌদি আরবে রয়েছে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। তাদের সংখ্যা প্রায় এক দশমিক দুই মিলিয়ন।
এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ওমান, বাহরাইন, জর্ডান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, কোরিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক রপ্তানির মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সীমিত আকারে যাওয়া প্রবাসীদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ হাজার ৮৭ জন।
প্রথম দিকে বাংলাদেশের শ্রমিকরা মূলত যুক্ত হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে। নব্বই দশকে উত্তর আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলোতেও তারা আগের তুলনায় আরও বেশি হারে যেতে শুরু করেন। ১৭ বছরের মাথায় ১৯৯৩ সালে এই সংখ্যা দুই লাখ অতিক্রম করে। ২০১৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক প্রবাসী বিদেশে পাড়ি জমান, যার সংখ্যা ছিল ১০ লাখ আট হাজার ৫২৫ জন। তবে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপে অদক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি ডাক্তার, প্রকৌশলী, স্থপতি, নার্সসহ বিভিন্ন পেশার মানুষও তুলনামূলকভাবে বেশি যাচ্ছেন। প্রবাসীদের আয়ের সিংহভাগ আসে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও আসে; তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রবাসীদের মধ্যে যারা তুলনামূলক বেশি আয়ের পেশায় জড়িত, তারা দেশে খুব কমই টাকা পাঠান। বরং তাদের অনেকে উল্টো দেশ থেকে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করাসহ নানাভাবে অর্জিত অর্থ সেসব দেশে নিয়ে যান। নিয়মিত টাকা পাঠান বিভিন্ন দেশে কর্মরত বৈধ ও অবৈধ শ্রমিকরা।
রেমিট্যান্স খাতে বাংলাদেশের অর্জন
২০১৯ সালে রেমিট্যান্স অর্জনে শীর্ষ ১০ দেশের চিত্র, ছবি : সংগৃহীত
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মতো। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ছয়-সাত লাখ মানুষ শ্রম বেচতে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। গড়ে প্রতি মাসে এই সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ হাজার। এসব প্রবাসীরা বছরে গড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, স্থানীয় মুদ্রায় যা এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেকের বেশি। এই বিপুলসংখ্যক লোক বিদেশ-বিভূঁইয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে শুধু পরিবারে অন্ন-বস্ত্রের সুব্যবস্থা করেনি, সচল রেখেছে দেশের অর্থনীতির চাকাও।
২০১৫ সালে প্রবাসীরা এক লাখ ৩০ হাজার ২৯৩ দশমিক ৬১ কোটি টাকা পাঠায় বাংলাদেশে। এটি ধাবমান গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারে। করোনার এই দুঃসময় ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠায়, যার পরিমাণ এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
করোনা মহামারির কারণে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাবে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির ১৫ দিনেই প্রায় এক বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। মার্চ থেকে করোনার কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যায়। এ কারণে শুরুতে কয়েক মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। যেমন- ২০২০ সালের মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ২০১৯ সালের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। পরের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স আরও কমে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে চলে আসে, তাও গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। কিন্তু মে মাসে চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। প্রথম ১১ দিনে ৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। ১৯ মে তা ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ৩১ মে মাস শেষে সেই রেমিট্যান্স গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। আসলে স্বাভাবিক সময়ে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ যা প্রকৃতপক্ষে এই পরিমাণ অনেক বেশি। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে তা প্রায় দ্বিগুণের মতো। করোনার কারণে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর সকল উপায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা তাদের আয় বাধ্য হয়ে বৈধ পথেই পাঠায়। এ কারণেই এ সময়ে সরকারি হিসাবমতে রেমিট্যান্স প্রবাহ এত বেশি দেখা যাচ্ছে।
দেশে করোনার এই দুঃসময়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সব কল্পনা মুছে দিয়ে এই কঠিন সময়েও রেমিট্যান্সের সূচক ঊর্ধ্বমুখী রেখেছেন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান তারা, যার পরিমাণ ছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। করোনার মাঝে রেমিট্যান্সের এই ঊর্ধ্বগতি সত্যই আমাদের জন্য আশা জাগানিয়া।
সরকারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদিশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা
স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পনর্গঠনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সময় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও কর্মী প্রেরণ বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশসমূহের সাথে সমঝোতা সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাংলাদেশি কর্মীদের গমন শুরু হয়। ধীরে ধীরে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। শ্রমিক হিসেবে বিদেশ গমনেচ্ছু মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এই খাতে উত্তরোত্তর রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে বিপুল প্রভাব ফেলে। তাই বৈদেশিক কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।
এরই ক্রমধারায় সরকার ২০০১ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়’ নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে। এ মন্ত্রণালয় গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপদ অভিবাসন, প্রবাসী ও বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ। এ
প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৭টি দেশে ২৯টি শ্রম কল্যাণ উইং শ্রম বাজার সম্প্রসারণ, সুসংহতকরণসহ বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দেশের সকল অঞ্চল হতে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল অভিবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রবাসীদের সুরক্ষায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ
*প্রবাসীদের সুরক্ষার বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গঠন করেছে। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
*তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।এখন মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকগণ যেতে পারছে।
*বিদেশ যাওয়ার ঋণ ছাড়াও দেশে ফেরত প্রবাসীদের জন্য রি-ইন্ট্রিগ্রেশন ঋণ চালু করা হয়েছে। ফলে চাকরি থেকে ফিরে আসার পর তারা চাইলে উপযোগী আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে পুঁজির যোগান পাবেন। তাছাড়া ‘ওয়েজ আর্নারস বন্ড’ চালুর মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রবাসীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
*সরকারের আরেকটি প্রসংশনীয় উদ্যোগ হলো- সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের প্রতি বছর পুরস্কার দিয়ে বিশেষভাবে সম্মানিত করা। এ ধারা চালু থাকলে প্রবাসীরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহী হবেন।
*বিমান বন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, প্রবাসীদের জন্য হাসপাতাল ও শিক্ষা কেন্দ্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবাসীদের সন্তানদের ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতকরণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
*প্রবাসীদের জন্য তিনটি বিমান বন্দরে হেল্প ডেস্ক স্থাপন,বিমান বন্দরে এম্বুলেন্স সার্ভিস চালু,প্রবাসীদের সন্তানদের স্কলারশিপ প্রদান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগসহ নানা কর্মসূচী সরকার হাতে নিয়েছে।
*প্রবাসে মৃত্যু হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিবার দেশে ৩ লক্ষ টাকা এবং বিমান বন্দরে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে লাশ পরিবহনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অসুস্থ ও পঙ্গু ব্যক্তিদের জন্য ১ লাখ টাকা প্রদান করা হচ্ছে, বিদেশগামী সকল কর্মীকে বীমা করে দেশের বাইরে আসার বিষয়টি ও নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
*প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করণে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিশেষ আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
*করোনার কারণে চাকরিচ্যুত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য সরকার ইতোমধ্যেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছে।
*করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদেশপ্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মীর পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে বিনিয়োগ ঋণ প্রদানের জন্য আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এ-সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।
*এছাড়াও সরকার প্রবাসিদের সুবিধার জন্য চালু করেছে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার নামক বিশেষ কল সেন্টার।রয়েছে ওয়েব মেইল,অনলাইনে অভিযোগপত্র দাখিলের ব্যবস্থা ও অনলাইনে ভিসা দাখিলের ব্যবস্থা।বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পেতে তাদের জন্য রয়েছে জাতীয় অনলাইন তথ্য বাতায়ন, বোয়েসেল ও বিএমইটি।
সর্বশেষ কথা
প্রবাসীদের পাঠানো টাকা কেবল তাদের পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে জীবনযাত্রার মানই বৃদ্ধি করে না বরং নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স। বিশ্বমন্দা এবং স্থানীয় নানা সমস্যা সত্ত্বেও অর্থনীতির যে সেক্টর নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি তা হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। এই খাত জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা নিরসনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে।
তাই জনসংখ্যা রপ্তানি কীভাবে বাড়ানো যায়, বৈদেশিক কমসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হবে এবং যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, মেকানিক, কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত কর্মীদের কীভাবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।
অনেকসময় বেসরকারি এজেন্সিগুলোর দ্বারা অনেক বিদেশ গমনেচ্ছুরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়।তারা নির্ধারিত মূল্যের থেকেও কয়েকগুণ বেশি চওড়া মূল্যে টাকা নেয়। জাল ভিসা দিয়ে বিদেশ নিয়ে তাদেরকে বিপদেও ফেলে। শেষ পর্যন্ত তাদের দেশে ফিরে এসে দেনার বোঝা টানতে টানতে তারা পুরোপুরি সর্বস্বান্ত হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি, অবৈধ এজেন্সিগুলোর উচ্ছেদ করতে হবে। দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যাতে এই প্রতারক চক্রের দ্বারা প্তারিত না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন