বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিসরীয় পিরামিডের অজানা সপ্তরহস্য!

মো. শাহীন
২৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:১০ |আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১ ১২:১৪
রহস্যময় পিরামিড। রয়টার্স
রহস্যময় পিরামিড। রয়টার্স

মিসরীয় পিরামিড প্রাচীন বিশ্বের অনবদ্য কীর্তি। এগুলো বিশ্ব সভ্যতার সপ্তাশ্চর্যের একটিও। প্রতিনিয়ত পিরামিড সম্পর্কে নতুন নতুন রহস্য উন্মোচন করছেন গবেষক ও পুরাতাত্ত্বিকরা। প্রতি বছরই হাজার হাজার পর্যটক অপূর্ব এইসব স্থাপত্য কীর্তি দেখতে ভিড় করেন। এই কারণেই পৃথিবীবাসীর কাছে মিসরের অন্য আরেক পরিচয় পিরামিডের দেশ নামে।

প্রাচীন এই স্থাপত্য যেন আপদমস্তক এক রহস্য! গবেষক ও পুরাতাত্ত্বিকরা নিত্য উন্মোচন করে চলেছেন একের পর এক অজানা সেই সব রহস্য। প্রাচীন মিথ ও প্রচলিত বিশ্বাস থেকে মিসরের ফারাওরা অবিনশ্বর এই পিরামিডগুলো নির্মাণ করেন।

আপনি যদি মনে করেন পিরামিড সম্পর্কে সব কিছু জেনে গিয়েছেন, তাহলে আপনাকে এটাও জানতে হবে এটা এমন একটি অধ্যয়ন বিষয় যার অনেক কিছু এখনো আবিষ্কারের বাকি রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, মিসরীয় পিরামিড সম্পর্কে সাতটি অজানা রহস্য যা আপনি নাও জানতে পারেন।

দেখতে এক হলেও ভিন্ন 

পিরামিডগুলো ছবিতে একই রকম দেখতে মনে হলেও তা কিন্তু নয়। প্রতিটি পিরামিডের রয়েছে আলাদা আলাদা আকৃতি ও গঠন। প্রথম দিকের পিরামিডগুলো ছিলো সমতল ধরনের। এ ধরনের অনেক পিরামিড পাওয়া গেছে মিসরের প্রাচীন রাজধানী মেম্পিসে অবস্থিত সাকার কবরস্থান থেকে। এই জায়গার পিরামিডগুলোই সবচেয়ে প্রাচীন। যার মধ্যে রয়েছে জোসার পিরামিডটি। এগুলো নির্মাণ করা হয় মিসরের তৃতীয় রাজশাসনামলে ও ডিজাইন করেন স্থপতি ইমোটেপ। ধারণা করা হয় আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ২৬৩০ থেকে ২৬১১ সালে নির্মিত হয়েছিল। 

অধিকাংশ পিরামিড নীল নদের পশ্চিম তীরে

প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার সমস্ত সংস্কৃতিতে রয়েছে প্রতীক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব। প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে রয়েছে এই বিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। পিরামিডের স্থান নির্বাচনও যে প্রচলিত বিশ্বাস থেকে করা হয়েছে তা না বললেও হয়তো চলবে।

অধিকাংশ পিরামিড নির্মিত হয়েছে প্রাচীন নীল নদের পশ্চিম তীরে। প্রাচীন মিসরের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, পিরামিডগুলো ছিলো ফারাওদের সর্বশেষ বিশ্রাম স্থান। যেখানে তারা চিরদিনের তরে থাকবেন। প্রাচীন মিসরীয়দের মতে, পরকাল ও সূর্যের মধ্যে রয়েছে এক সম্পর্ক। সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। যা প্রতীকী অর্থে মৃত্যুকে বোঝায়। ফারাওদের নীল নদের পশ্চিম তীরে সমাধিস্থ করে তাদের মৃত্যু নির্দেশ করা হতো।

প্রতিটি পাথর ২.৫ টন!

মিসরীয় পিরামিড কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, এটা এখনো রহস্য। গবেষকরা এখন পর্যন্ত তা উন্মোচন করতে পারেননি। গিজা পিরামিডে ২০ লাখের বেশি চুনাপাথর ও গ্রানাইড ব্যবহার করা হয়েছে। যাদের প্রতিটির ওজন প্রায় আড়াই টন।

তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, এত বড় বড় পাথর সেই প্রাচীন যুগে কীভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিসরীয়রা এ সম্পর্কে কোনো কিছু লিখে যায়নি। তারপরও বছরের পর বছর গবেষকরা বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা বলে চলেছেন।

খ্রিস্টপূর্ব উনিশ শতকের এক চিত্রকর্মে এ বিষয়ের কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। যেখানে চিত্রিত করা হয়েছে একদল মানুষ একটি স্লেজগাড়িতে ধাক্কা দিচ্ছে এবং আরেকজন মানুষ সামনে থেকে বালিতে পানি ঢালছে। যদিও মনে করা হয় এটা কোনো উৎসবকে নির্দেশ করে। তথাপি এটাই বৈজ্ঞানিক যুক্তি, যার মাধ্যমে জানা যায় কীভাবে এত বড় বড় পাথর খণ্ড সরানো হতো।

পিরামিড নির্মাণে জোতির্বিজ্ঞানের ব্যবহার

একজন ব্রিটিশ মিসরীয় পুরাতাত্ত্বিকের মতে, নক্ষত্রকে কাজে লাগিয়ে পিরামিডগুলোকে সারিবদ্ধ করা হয়েছে। ২০০০ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেইট স্পেন্সের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কীভাবে বড় ডিপার ও ছোট ডিপার পিরামিডগুলোকে উত্তর-দক্ষিণে সারিবদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়েছে।

ক্রীতদাসরা পিরামিড নির্মাণ করেনি! 

প্রাচীন সভ্যতায় আমরা দেখতে পাই, এই ধরনের কাজ সাধারণ ক্রীতদাসরা করে। তাইতো ক্রীতদাসরা পিরামিড নির্মাণ করেছে; দীর্ঘ দিন ধরে চলে এসেছে এই কথা। যা সত্য নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুরাতাত্ত্বিকরা।

গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডডাস মূলত তার লেখার মাধ্যমে এই তথ্য প্রদান করেছেন। তারপর হলিউডের মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯০ এর দশকে পিরামিড নির্মাতাদের কবর আবিষ্কার হয়। পুরাতাত্ত্বিকরা প্রায় নিশ্চিত এটা ক্রীতদাসদের কবর হতে পারে না বরং তারা নিম্ন আয়ের মানুষ হতে পারে। কেননা পিরামিড নির্মাণে তাদের ভূমিকার সম্মানে তাদের কবরে সমাধিস্থ করা হয়েছে যা সাধারণ ক্রীতদাসের সঙ্গে করা হতো না।

গিজা পিরামিড বলতো সময়ও! 

গিজা শুধু বিশিষ্ট মিসরীয় পিরামিড হিসেবে চিহ্নিত নয় এটা প্রাচীন বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের একটি। যা এখনো অবস্থান করছে। গিজা পিরামিডটি আকর্ষণীয় বিভিন্ন কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কারণটি হলো বিশিষ্ট এই পিরামিডটি সময় বলতে পারতো। বিশাল স্থাপত্যটি একটি সূর্যঘড়ির মতো কাজ করে।

এখনো রহস্য উন্মোচন করে চলেছেন পুরাতাত্ত্বিকরা...

মিসরীয় পুরাতত্ত্ব একটি খুব সক্রিয় ক্ষেত্র। কোনো ধরনের লিখিত শিলালিপি ছাড়া গবেষকরা এগিয়ে যাচ্ছেন। গবেষকরা খনন ও প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন অপ্রকাশিত রহস্য উন্মোচনে কাজ করে চলেছেন। যেমন, সম্প্রতি মিসরের লুক্সার শহরে একটি রাস্তা আবিষ্কার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পণ্ডিতরা ধারণা করছেন পিরামিড নির্মাণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদান করতেন মিসরীয়রা। 

সাকার কবরস্থানের কাছে বিড়ালের মমি ও হাজার হাজার কাঠের বিড়ালের ভাস্কর্য নির্দেশ করে মিসরীয় পিরামিড নিয়ে আরও কত কিছু আবিষ্কারের বাকি রয়ে গেছে!



মন্তব্য করুন